কিডনি রোগের কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার

Share Now!

কিডনি রোগের কারণ

 




কিডনি আমাদের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যা রক্ত পরিশোধন, শরীরের পানির ভারসাম্য বজায় রাখা, খনিজ নিয়ন্ত্রণ এবং বর্জ্য পদার্থ অপসারণের কাজে সহায়তা করে। তবে বর্তমানে অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, খাদ্যাভ্যাস ও কিছু স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণে কিডনি রোগ একটি সাধারণ ও ভয়ংকর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজ আমরা আলোচনা করব কিডনি রোগের কারণ, লক্ষন ও প্রতিকার নিয়ে।

বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে ক্রনিক কিডনি ডিজিজ (CKD)-এর হার আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। তাই সময় থাকতেই এর কারণ, লক্ষণ এবং প্রতিকার সম্পর্কে সচেতন হওয়া জরুরি।


Table of Contents

আরও পড়ুনঃ

ভিটামিন ডি কি? – ভিটামিন ডি এর অভাবে কি হয়? – এর লক্ষন ও প্রতিকার কি?


কিডনি রোগের প্রধান কারণসমূহ (Causes of Kidney Disease)

কিডনি রোগের অনেক কারণ থাকতে পারে। নিচে উল্লেখযোগ্য কিছু কারণ দেওয়া হলো:

১. ডায়াবেটিস (Diabetes)

ডায়াবেটিস হলো কিডনি রোগের অন্যতম প্রধান কারণ। দীর্ঘমেয়াদে অনিয়ন্ত্রিত রক্তে শর্করার পরিমাণ কিডনির ক্ষতি করে।

২. উচ্চ রক্তচাপ (High Blood Pressure)

উচ্চ রক্তচাপের কারণে কিডনির রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা কিডনি ফেইলিওরের কারণ হতে পারে।

৩. অতিরিক্ত লবণ ও প্রোটিন গ্রহণ

দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত লবণ ও প্রোটিন গ্রহণ কিডনির উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে।

৪. পর্যাপ্ত পানি না পান করা

পানি পান না করা কিডনির সঠিক কার্যকারিতা ব্যাহত করে, যার ফলে বর্জ্য পদার্থ জমে কিডনির ক্ষতি হয়।

৫. ওষুধের অপব্যবহার

প্রচলিত ব্যথানাশক ওষুধ যেমন Ibuprofen বা Diclofenac নিয়মিত বা অতিরিক্ত সেবন কিডনির ক্ষতি করে।

৬. ধূমপান ও অ্যালকোহল

ধূমপান কিডনির রক্তপ্রবাহ কমিয়ে দেয় এবং ধীরে ধীরে কার্যক্ষমতা নষ্ট করে।

৭. বংশগত কারণ

Polycystic Kidney Disease-এর মতো বংশগত রোগ থেকেও কিডনি নষ্ট হতে পারে।


কিডনি রোগের লক্ষণসমূহ (Symptoms of Kidney Disease)

প্রাথমিক পর্যায়ে কিডনি রোগের লক্ষণ খুব কম দেখা যায়, তাই একে ‘নীরব ঘাতক’ বলা হয়। কিন্তু সময়ের সাথে নিচের লক্ষণগুলো দেখা যেতে পারে:

  • অতিরিক্ত ক্লান্তি ও দুর্বলতা

  • খাবারে অরুচি, বমিভাব বা বমি

  • প্রস্রাবে ফেনা বা রক্ত দেখা যাওয়া

  • মুখ, হাত-পা ও পায়ে ফোলা

  • প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া বা অতিরিক্ত হওয়া

  • ঘন ঘন প্রস্রাব লাগা, বিশেষ করে রাতে

  • শ্বাসকষ্ট, বিশেষ করে ঘুমানোর সময়

  • ত্বকে চুলকানি


কিডনি রোগের ঝুঁকি যাদের বেশি (High Risk Groups)

  • ডায়াবেটিস রোগী

  • উচ্চ রক্তচাপযুক্ত ব্যক্তি

  • স্থূলতা ও অতিরিক্ত ওজন

  • ৬০ বছরের বেশি বয়সী

  • যাদের পরিবারে কিডনি রোগের ইতিহাস আছে

  • যারা নিয়মিত ওষুধ সেবন করেন


আরও পড়ুনঃ

পালংশাকের পুষ্টিগুন – পালংশাকের উপকারিতা ও অপকারিতা


 

কিডনি রোগ প্রতিরোধে করণীয় (Prevention of Kidney Disease)

নিম্নোক্ত অভ্যাসগুলো গড়ে তুললে কিডনি রোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব:

১. পর্যাপ্ত পানি পান করুন

প্রতিদিন কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন।

২. রক্তচাপ ও রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণ

ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ থাকলে তা নিয়মিত নিয়ন্ত্রণে রাখুন।

৩. ব্যায়াম করুন

নিয়মিত হালকা ব্যায়াম যেমন হাঁটা, সাইক্লিং, যোগাসন শরীর সুস্থ রাখে।

৪. লবণ ও চিনি কম খান

অতিরিক্ত লবণ বা চিনি গ্রহণ কিডনির জন্য ক্ষতিকর।

৫. ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার করুন

এসব অভ্যাস কিডনির কার্যক্ষমতা ধ্বংস করে।

৬. ওষুধ সেবনে সতর্কতা

চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ, বিশেষ করে ব্যথানাশক, সেবন করবেন না।

৭. বার্ষিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা

ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি বা যাদের পরিবারে কিডনি সমস্যা আছে, তাদের নিয়মিত কিডনি ফাংশন টেস্ট (Creatinine, eGFR, Urine ACR) করানো উচিত।


কিডনি রোগ হলে করণীয় (Treatment Options for Kidney Disease)

কিডনি রোগ ধরা পড়লে দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে:

  • ডায়েটারি মডিফিকেশন: প্রোটিন ও সোডিয়াম নিয়ন্ত্রিত খাবার

  • ওষুধ: রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য নির্দিষ্ট ওষুধ

  • ডায়ালাইসিস: কিডনি সম্পূর্ণভাবে কাজ না করলে

  • কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট: চূড়ান্ত পর্যায়ে


কিডনি ভালো রাখার স্বাস্থ্যকর অভ্যাস (Healthy Lifestyle for Kidney Health)

  • দিনে অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমান

  • মানসিক চাপ কমাতে মেডিটেশন করুন

  • প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন

  • বেশি পানি দিয়ে রান্না করা খাবার খান

  • নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন


প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলি (FAQ)

কিডনি রোগ কি নিরাময়যোগ্য?

প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে কিছু কিডনি রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। তবে চূড়ান্ত পর্যায়ে গেলে কেবল ডায়ালাইসিস বা ট্রান্সপ্লান্টই সমাধান।

কিডনি ভালো রাখার জন্য প্রতিদিন কতটা পানি পান করা উচিত?

প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত।

প্রস্রাবে ফেনা আসা কি কিডনি রোগের লক্ষণ?

হ্যাঁ, এটি প্রোটিন ইউরিয়া-র লক্ষণ, যা কিডনি রোগের ইঙ্গিত হতে পারে।

কিডনি রোগ প্রতিরোধে সেরা খাবার কী কী?

তাজা ফলমূল, শাকসবজি, কম লবণযুক্ত খাবার, ওটস, বাদাম, এবং পর্যাপ্ত পানি গ্রহণ উপকারী।

ডায়ালাইসিস ছাড়া কি কিডনি রোগ ভালো হয়?

শুরুর দিকে চিকিৎসা ও জীবনযাপন পরিবর্তনের মাধ্যমে অনেক সময় ডায়ালাইসিস এড়ানো সম্ভব।


উপসংহার

কিডনি সুস্থ রাখতে হলে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা জরুরি। কিডনি রোগের কোনো উপসর্গ দেখা দিলেই দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। মনে রাখবেন, সচেতনতাই কিডনি রোগ প্রতিরোধের প্রধান চাবিকাঠি।

Leave a Reply