
রমজান মাস ইসলাম ধর্মের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ও বরকতময় মাস। এই মাসে আল্লাহ তাআলা মুসলিমদের জন্য রোজা ফরজ করেছেন এবং অসংখ্য ফজিলত ও বরকত দান করেছেন। রমজান মাসে ইবাদতের সওয়াব বহুগুণে বৃদ্ধি করা হয়, গুনাহ মাফ করা হয় এবং জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়। এই আর্টিকেলে আমরা রমজানের ফজিলত, হাদিসের আলোকে রমজানের গুরুত্ব, রমজানে করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
রমজানের ফজিলত
রমজান মাসের ফজিলত অপরিসীম। এই মাসে কুরআন নাজিল হয়েছে, যা মানব জাতির জন্য হিদায়াত ও রহমত স্বরূপ। আল্লাহ তাআলা বলেন:
“রমজান মাস, যাতে কুরআন নাজিল করা হয়েছে, যা মানুষের জন্য হিদায়াত এবং সত্য পথের সুস্পষ্ট নিদর্শন ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী।” (সুরা আল-বাকারা, আয়াত ১৮৫)
রমজান মাসে শয়তানকে শৃঙ্খলিত করা হয়, জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই মাসে মুসলিমরা বেশি বেশি ইবাদত করে আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করে।
আরও পড়ুনঃ
রমজানের রোজার ইতিহাস, তাৎপর্য, উদ্দেশ্য ও ফজিলত
রমজানের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস
হাদিসে রমজানের ফজিলত সম্পর্কে অনেক বর্ণনা রয়েছে। নিচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ হাদিস উল্লেখ করা হলো:
১। রমজান মাসের আগমনী বার্তা:
নবীজি (সা.) বলেছেন,
“যখন রমজান মাস আসে, তখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানদের শৃঙ্খলিত করা হয়।” (সহিহ বুখারি)
২। গুনাহ মাফের সুযোগ:
নবীজি (সা.) বলেছেন,
“যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াবের আশায় রমজানে রোজা রাখে, তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।” (সহিহ বুখারি)
৩। লাইলাতুল কদরের ফজিলত:
নবীজি (সা.) বলেছেন,
“যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে ঈমানের সাথে ও সওয়াবের আশায় ইবাদত করে, তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।” (সহিহ বুখারি)
৪। রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দ:
নবীজি (সা.) বলেছেন,
“রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দ: একটি ইফতারের সময়, অন্যটি আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের সময়।” (সহিহ মুসলিম)
রমজানে করণীয়
রমজান মাসে আমাদের কিছু বিশেষ আমল ও করণীয় বিষয় রয়েছে, যা আমাদেরকে আল্লাহর নৈকট্য লাভে সাহায্য করে। নিচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ করণীয় বিষয় উল্লেখ করা হলো:
১। রোজা রাখা:
রমজান মাসে রোজা রাখা ফরজ। আল্লাহ তাআলা বলেন:
“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।” (সুরা আল-বাকারা, আয়াত ১৮৩)
২। কুরআন তিলাওয়াত:
রমজান মাসে কুরআন নাজিল হয়েছে, তাই এই মাসে বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করা উচিত। নবীজি (সা.) রমজান মাসে জিবরাইল (আ.)-এর সাথে কুরআন মুতালা করতেন।
৩। তরাবিহ নামাজ পড়া:
তরাবিহ নামাজ রমজান মাসের একটি বিশেষ ইবাদত। নবীজি (সা.) বলেছেন,
“যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াবের আশায় রমজানে কিয়ামুল লাইল (তরাবিহ) করে, তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।” (সহিহ বুখারি)
৪। দান-সদকা করা:
রমজান মাসে দান-সদকার সওয়াব বহুগুণে বৃদ্ধি করা হয়। নবীজি (সা.) এই মাসে বেশি বেশি দান করতেন।
৫। ইতিকাফ করা:
রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করা সুন্নত। ইতিকাফের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর ইবাদতে নিজেকে নিবেদিত করতে পারি।
রমজানে বর্জনীয়
রমজান মাসে কিছু কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত, যা আমাদের রোজার পবিত্রতা নষ্ট করতে পারে। নিচে কয়েকটি বর্জনীয় বিষয় উল্লেখ করা হলো:
১। গুনাহ থেকে দূরে থাকা:
রোজা শুধু ক্ষুধা ও তৃষ্ণা নিয়ন্ত্রণ নয়, বরং সব ধরনের গুনাহ থেকে দূরে থাকা। নবীজি (সা.) বলেছেন,
“যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও মিথ্যা কাজ ত্যাগ করে না, তার ক্ষুধা ও তৃষ্ণা সহ্য করার কোনো মূল্য আল্লাহর কাছে নেই।” (সহিহ বুখারি)
২। অশ্লীল কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকা:
রোজার সময় অশ্লীল কথা, গান-বাজনা, অশ্লীল চলচ্চিত্র দেখা ইত্যাদি থেকে দূরে থাকা উচিত।
৩। ইফতারে অপচয় না করা:
ইফতারে অপচয় ও বিলাসিতা থেকে বিরত থাকা উচিত। রোজাদারের উচিত মিতব্যয়ী হওয়া।
৪ অলসতা ত্যাগ করা:
রমজান মাসে অলসতা ত্যাগ করে বেশি বেশি ইবাদত করা উচিত।
রমজান সম্পর্কে FAQ (প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন)
১। রমজান মাসে রোজা রাখা কেন ফরজ?
রোজা রাখা ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে একটি এবং এটি তাকওয়া অর্জনের মাধ্যম।
২। রমজানে কুরআন তিলাওয়াতের ফজিলত কি?
রমজানে কুরআন তিলাওয়াতের সওয়াব বহুগুণে বৃদ্ধি করা হয়।
৩। তরাবিহ নামাজ কি রমজান মাসেই পড়তে হয়?
হ্যাঁ, তরাবিহ নামাজ শুধু রমজান মাসেই পড়া হয়।
৪। রোজা ভঙ্গের কারণগুলো কি?
ইচ্ছাকৃত খাওয়া-দাওয়া, পান করা, স্ত্রী সহবাস ইত্যাদি রোজা ভঙ্গের কারণ।
৫। রমজানে ইতিকাফ করা কি জরুরি?
ইতিকাফ করা সুন্নত, বিশেষ করে রমজানের শেষ দশকে।
৬। রমজানে দান-সদকার গুরুত্ব কি?
রমজানে দান-সদকার সওয়াব বহুগুণে বৃদ্ধি করা হয়।
উপসংহার
রমজান মাস মুসলিমদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি বিশেষ উপহার। এই মাসে আমরা আত্মশুদ্ধি, তাকওয়া অর্জন এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করি। রমজানের ফজিলত, করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়গুলো জানা এবং তা পালন করা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই মাসের প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগিয়ে আমরা আমাদের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করতে পারি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি।
এই আর্টিকেলটি যদি আপনার উপকারে আসে তবে শেয়ার করতে ভুলবেন না। রমজান মোবারক!