পেপ্যাল কি আসবে বাংলাদেশে

Share Now!

 

Paypal


বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক:
পেপ্যাল (PayPal)—বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় একটি অনলাইন লেনদেন সেবা। কিন্তু একুশ শতকের ডিজিটাল যুগে এসেও বাংলাদেশে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়নি এই গুরুত্বপূর্ণ পেমেন্ট গেটওয়েটি। ফলে হাজার হাজার ফ্রিল্যান্সার, ই-কমার্স উদ্যোক্তা, এবং আন্তর্জাতিক লেনদেনে যুক্ত পেশাজীবীরা বছরের পর বছর ধরে অপেক্ষা করছেন, কবে পেপ্যাল বাংলাদেশে আসবে?

পেপ্যাল নিয়ে আলোচনা নতুন নয়। ২০১৬ থেকে শুরু করে ২০২1 সাল পর্যন্ত বহুবার সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, কিন্তু বাস্তবে আজও সেটি কার্যকর হয়নি। ২০২৫ সালে সরকার পরিবর্তনের পর আবারও আলোচনায় এসেছে “পেপ্যাল কি বাংলাদেশে চালু হবে?” প্রশ্নটি।


Table of Contents

আরও পড়ুনঃ

একজন গ্রাহক ১০টির বেশি সিম কিনতে পারবে না


পেপ্যাল না আসার মূল কারণগুলো কী?

বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, পেপ্যাল বাংলাদেশে না আসার পেছনে রয়েছে একাধিক কারিগরি ও নীতিগত বাধা। চলুন দেখে নেওয়া যাক:

১. ফাইন্যান্সিয়াল সিকিউরিটির অভাব

বাংলাদেশে অনলাইন আর্থিক প্রতারণা মোকাবেলার জন্য ২৪/৭ কার্যকর সাপোর্ট সিস্টেম এখনো নেই। পেপ্যাল একটি সেনসিটিভ পেমেন্ট গেটওয়ে, যেখানে নিরাপত্তা সবচেয়ে বড় বিষয়।

২. ঠিকানা যাচাইয়ের (Address Verification) সমস্যা

পেপ্যাল এখনো অ্যাকাউন্ট খোলার সময় ব্যবহারকারীদের ঠিকানা যাচাই করে। বাংলাদেশে এখনো জাতীয় পর্যায়ে একটি ইউনিফায়েড অ্যাড্রেস ভেরিফিকেশন সিস্টেম চালু হয়নি।

৩. একমুখী লেনদেন নীতিমালা

বাংলাদেশ ব্যাংক এখনো কেবল একমুখী (inbound) লেনদেনকে অগ্রাধিকার দেয়। কিন্তু পেপ্যাল একটি দ্বিমুখী (bidirectional) সেবা, যেখানে লেনদেন পাঠানো ও গ্রহণ—উভয়ই প্রয়োজন।

৪. আঞ্চলিক রাজনৈতিক প্রভাব

বাংলাদেশের অনুরোধ প্রায়শই ভারতের পেপ্যাল অফিসে পাঠানো হয়, কিন্তু সেখানে খুব একটা সাড়া পাওয়া যায় না। পেপ্যাল সিঙ্গাপুর অফিসেও বেশিরভাগ কর্মকর্তা ভারতীয়, ফলে বিষয়টি আরও জটিল হয়ে ওঠে।


পেপ্যাল নিয়ে ফ্রিল্যান্সারদের প্রতিক্রিয়া

ঢাকা ও মধুপুরের ফ্রিল্যান্সাররা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে প্রতিশ্রুতি শুনলেও বাস্তবে কোনো ফলাফল দেখা যায়নি। পেপ্যাল না থাকায় তাঁদের আন্তর্জাতিক লেনদেনে এখনো ব্যয়বহুল ও জটিল বিকল্প ব্যবহার করতে হয় যেমন: Payoneer, Wise, Skrill ইত্যাদি।

তৌহিদুর রহমান বলেন,
“পেপ্যাল এলে আমাদের আয় গ্রহণ অনেক সহজ হবে। কিন্তু যতদিন না সরকারি ও প্রযুক্তিগত জটিলতা দূর হচ্ছে, ততদিন এটা স্বপ্নই থেকে যাবে।”


অতীতের প্রতিশ্রুতিগুলো

  • ২০১৬: সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি হয়, কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি।

  • ২০১৭: ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড মেলায় ‘পেপ্যাল চালু’ ঘোষণা দেওয়া হলেও সেটা ছিল মূলত পেপ্যালের রেমিটেন্স সেবা ‘Xoom’।

  • ২০২১: সাবেক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ঘোষণা দেন ডিসেম্বরেই পেপ্যাল চালু হবে, কিন্তু সেটিও হয়নি।

  • ২০২৫: সরকার পরিবর্তনের পর আবার নতুন আশার আলো দেখা দিয়েছে।


কীভাবে পেপ্যাল আসা সম্ভব?

পেপ্যাল বাংলাদেশে আনতে হলে যেসব পদক্ষেপ জরুরি:

  1. ২৪ ঘণ্টার আর্থিক সিকিউরিটি সাপোর্ট চালু করা

  2. জাতীয় ঠিকানা যাচাই ব্যবস্থা চালু করা

  3. দ্বিমুখী লেনদেন নীতিমালা অনুমোদন

  4. যুক্তরাষ্ট্র ও সিঙ্গাপুরে সরাসরি কূটনৈতিক লেভেলে আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া

  5. ফ্রিল্যান্সারদের সাথে বসে বাস্তব সমস্যাগুলো তুলে ধরা


পেপ্যাল চালু হলে কী কী সুবিধা পাওয়া যাবে?

  • ফ্রিল্যান্সাররা সহজে ও কম খরচে আয় আনতে পারবেন।

  • আন্তর্জাতিক ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে পেমেন্ট নিতে সুবিধা হবে।

  • ডিজিটাল উদ্যোক্তাদের জন্য বৈশ্বিক লেনদেন সহজ হবে।

  • দেশের রেমিটেন্স প্রবাহ আরও ডিজিটাল হবে।


গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর (FAQ)

প্রশ্ন ১: পেপ্যাল কি বাংলাদেশে এখনো চালু হয়নি?

উত্তর: না, এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে পেপ্যাল বাংলাদেশে চালু হয়নি। শুধুমাত্র Xoom রেমিটেন্স সেবা সীমিত আকারে চালু ছিল।

প্রশ্ন ২: পেপ্যাল বাংলাদেশে না আসার কারণ কী?

উত্তর: মূলত ফাইন্যান্সিয়াল নিরাপত্তার ঘাটতি, ঠিকানা যাচাইয়ের অভাব এবং একমুখী লেনদেন নীতিমালাই এর প্রধান কারণ।

প্রশ্ন ৩: কবে পেপ্যাল বাংলাদেশে আসতে পারে?

উত্তর: নির্দিষ্ট সময় বলা কঠিন। তবে নতুন সরকার এখন মার্কিন দূতাবাস ও সিঙ্গাপুর অফিসের সঙ্গে কাজ করছে। কিছু অগ্রগতি হলে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে।

প্রশ্ন ৪: পেপ্যালের বিকল্প কী আছে বাংলাদেশে?

উত্তর: বর্তমানে Payoneer, Wise, Skrill, Neteller ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়। তবে এগুলো পেপ্যালের মতো সর্বব্যাপী নয়।

প্রশ্ন ৫: পেপ্যাল এলে ফ্রিল্যান্সাররা কীভাবে উপকৃত হবেন?

উত্তর: তারা কম খরচে, দ্রুত এবং নিরাপদে আন্তর্জাতিক লেনদেন করতে পারবেন। আয় গ্রহণ হবে সরাসরি এবং ঝামেলাহীন।


উপসংহার

পেপ্যাল বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সার ও ডিজিটাল উদ্যোক্তাদের জন্য কেবল একটি প্রযুক্তি নয়, এটি একটি বড় প্রত্যাশা। বহু বছর ধরে প্রতিশ্রুতি আসলেও বাস্তবে তা এখনো অধরা। তবে সরকারের সদিচ্ছা এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতিক চেষ্টার মাধ্যমে শিগগিরই পেপ্যাল বাংলাদেশে চালু হতে পারে—এমনটাই আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।


আপনি চাইলে এই নিবন্ধের অডিও ভয়েসওভার বা ভিডিও স্ক্রিপ্টও তৈরি করে দিতে পারি। দরকার হলে বলেন!

Leave a Reply