অনলাইন শপিং প্রতারণা থেকে বাঁচার উপায়

Share Now!

অনলাইন শপিং প্রতারণা

অনলাইন শপিং প্রতারণা বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে, অনলাইন নির্ভর হয়ে পরছি কমবেশি সবাই। তার মধ্যে আছে মহামারি করনা, আগের মত আর শপিংমলে গিয়ে কেনাকাটা করার আগ্রহ নেই আমাদের।  এই কারণে নিজেদের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র কেনাকাটা করার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে অনলাইন। দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র থেকে শুরু করে জামাকাপড়, আসবাবপত্র কিনতে অনলাইন নির্ভর হচ্ছে সারা বিশ্ব।

এছাড়াও  মানুষ আগের তুলনায় অনেক বাস্ত তাই আর  মার্কেট ঘুরে ঘুরে জিনিসপত্র কেনার জন্য পর্যাপ্ত সময় নেই।  বাড়ি কিংবা অফিসে বসেই অর্ডার দিলেই ২৪ ঘণ্টার মধ্য  পছন্দের পণ্য চলে আসছে বাড়ী কিংবা অফিসে। এছাড়াও বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে থাকছে অনেক ছাড়। এসবের কারণেই দিন দিন সবাই অনলাইন শপিংয়ে  নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন।

এই সুযোগ কে কাজে লাগিয়ে একদল প্রতারক হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। ফলে ক্ষতি গ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। কিভাবে এই অনলাইন শপিং প্রতারণা থেকে বাঁচা  যায় এই বিষয়ে আজকের আয়োজন। তো চলুন দেখে নেই অনলাইন শপিং প্রতারণা থেকে মুক্তির উপায়।

[lwptoc min=”2″ depth=”6″]

অনলাইন শপিং প্রতারণা থেকে বাঁচার উপায়

অ্যাকাউন্ট থেকে সাফ হয়ে যাচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। এদিকে আপনি যদি ডেবিট অথবা কেডিট কার্ড ব্যবহার করে অনলাইন শপিংয়ে আসক্ত হন তাহলে সতর্ক থাকুন এবং প্রতারণার হাত থেকে বাঁচতে নিচের এই বিষয় গুলো মাথায় রাখুন-

প্রতারণা থেকে বাঁচার উপায়ঃ

  • প্রথমত অচেনা কোনও ই-কমার্স (eCommerce) সাইটে নিজের Bank Account অথবা ডেবিট অথবা কেডিট কার্ডের তথ্য দেবেন না। প্রতারনা এরাতে শুধুমাত্র জনপ্রিয় ও পরিচিত অনলাইন শপিং সাইট থেকেই শপিং করুন।
  • ফেসবুক পেজ থেকে কোন পণ্য অর্ডার করবেন না । এ ক্ষেত্রে প্রতারিত হওয়ার সমভাবনা অনেক বেশি। কিনলেও যে পেজ গুলো ফেসবুক করতীক Verified সেই পেজ গুলো থেকে কিনতে পারেন। সবাই প্রতারক না অনেক ভাল পেজও আছে যারা সৎতার সাথে পণ্য বিক্রি করে থাকেন। 
  • পেজের বয়স দেখে কেনা কাটা করুন। ফেসবুকে অনলাইন কেনাকাটায় প্রতারণার ঘটনাগুলোতে উল্লেখযোগ্য ক্ষেত্রেই দেখা যায়, সেই পেইজগুলো নতুন করে তৈরি করা।সুতরাং আনকোরা কোন পেইজ থেকে অর্ডার করার আগে সেটি সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিন। দেখুন, পেইজটিতে প্রোডাক্ট নিয়ে ফেসবুক লাইভ হচ্ছে কি-না।পেইজটিতে যেসব পোস্ট বুস্ট করা হয়েছে, সেগুলোর তুলনায় অন্য পোস্টগুলোতে লাইক-কমেন্ট অস্বাভাবিক কম থাকলে সতর্ক হোন। এছাড়া ঠিকানা এবং রিভিউ অপশন আছে কি-না দেখে নিন। পোস্টের কমেন্টগুলো পড়ুন। তারপর সিদ্ধান্ত নিন।
  • ই-মেইল কিংবা হোয়াটসঅ্যাপে অনেক সময় নানা রকম অফার লিংক আসে। এছাড়াও  সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমেও অনেক অচেনা লিংক পেতে পারেন। সেখানে নিজের ব্যক্তিগত তথ্য দেওয়া তো দুরের কথা , লিঙ্কে ক্লিক না করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
  • অনলাইন লেনদেনের ক্ষেত্রে দেখে নিন সিকিউরিটি সকেট লেয়ার এনক্রিপটেড (Security socket layer encryption
    ) রয়েছে কি না অর্থাৎ যে URL-টি ওপেন করেছেন, সেটি দেখে নিন লিংকটির বাঁ-দিকে https:// আছে কি না। অনেক সময় http থাকে। S না থাকলে সেই সাইট এড়িয়ে যান।
  • অনেক সময় পরিচিত ওয়েবসাইটের নাম ভাঙিয়ে ফাঁদ পাতে থাকে প্রতারকরা। এক্ষেত্রে অবশই Domain এর নাম ও বানান সঠিক আছেন কিনা  যাচাই করে নেওয়া জরুরি।  
  • অনেক সময় কোনো কোনো অচেনা ভুঁইফোড় ই-কমার্স সাইট থেকে অবিশ্বাস্য ও লোভনীয় অফার দিয়ে থাকেন প্রতারকগোন । লোভে পড়ে সেই ফাঁদে পা দেবেন না, দিলেই বিপদ। আইফোন কিংবা ব্র্যান্ডের টিভি অথবা ভাল রেপুটেশন কোম্পানি কখনওই ৮০% ছাড়ে পণ্য বিক্রি করে না ।  তাই বুদ্ধি খাটিয়ে শপিং করুন। যে পণের ছাড় বেশি সেটা খারাপ হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি । বুজতে হবে …ডালমে কুছ কালা হায় … 
  • মাঝে মাঝে নিজের ইমেলের পাসওয়ার্ড বদলে ফেলুন এবং Email Two Step Verify করে নিন। বদলে ফেলতে পারেন ডেবিট কার্ডের মোবাইল পিন কোডও। পাশাপাশি লেনদেনের সময় OTP Verification করে নিলেও অনেকটাই নিরাপদে থাকতে পারবেন।
  • অনলাইন শপিং এর ক্ষেত্রে অপরিচিত সাইট এ কখুনই Advance পেমেন্ট করবেন না। ক্যাশ অন ডেলিভারি তে পণ্য ক্রয় করুন নিরাপদ থাকুন, ওহা অবশই পণ্য কেনার আগে product Review দেখে কিনুন। যদিও অনেক প্রতিষ্ঠান খারাপ রিভিউ গুলো ডিলেট করে দেয়।

এক কথায়, লোভে পরে , চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে, অবিশ্বাস্য মুলো ছারে পণ্য কিনবেন না । কোন Advance টাকা পেমেন্ট করবেন না । সর্বোপরি প্রোডাক্ট রিভিউ দেখে পণ্য কিনুন। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও কাড যে তেন জায়গায় Submit করবেন না ।

আরও পড়ুনঃ  

WhatsApp New Update – মোবাইলে ইন্টারনেট না থাকলেও চলবে পিসি’তে

প্রতারিত হওয়ার পর  করনীয় উপায় কি?

বাংলাদেশে অনলাইনে কেনাকাটা করতে গিয়ে প্রতারণার ঘটনা নতুন নয়। সম্প্রতি দেশটির বেশ কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংক অন্তত: ১০টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গ্রাহকদের কার্ডে লেনদেনে নিষেধাজ্ঞা দিলে বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে।

পণ্য কেনার আগে রিভিউ এবং ক্রেতাদের মন্তব্য দেখে নেয়া গুরুত্বপূর্ণ।

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

ছবির ক্যাপশান,

পণ্য কেনার আগে রিভিউ এবং ক্রেতাদের মন্তব্য দেখে নেয়া গুরুত্বপূর্ণ।

 

অনলাইনে পন্য কিনে প্রতারিত হলে আমাদের করনীয়

আপনার পছন্দ হওয়ায় একটি ফেসবুক পেজ থেকে একটি থ্রি-পিস বা পাঞ্জাবি অর্ডার দেন। সময়মতো বাসায় ডেলিভারি পান। কিন্তু পণ্য হাতে পাওয়ার পর আপনার মন খুব খারাপ হয়ে যায়। কারণ, কাঙ্ক্ষিত মানের পণ্য পাননি আপনি। তাঁর মানে হচ্ছে আপনি প্রতারিত হয়েছেন। অভিযোগ জানিয়ে অনলাইন মাধ্যমে যোগাযোগ করলে তাঁরা পণ্য পরিবর্তন বা ফেরত নিতে অস্বীকার করে।এই ধরনের ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে আমাদের চারপাশে।

 

আজকে আমরা জানবো অনলাইনে পন্য কিনে প্রতারিত হলে আমাদের করণীয়।

আপনি যদি অনলাইনে পণ্য কিনে প্রতারিত হন তাহলে দেশের প্রচলিত আইন অনুসারে ব্যবস্থা নিতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ চেয়েও দেওয়ানি আদালতে এবং প্রতারণার অভিযোগে ফৌজদারি আদালতে মামলা করতে পারবেন। এ ছাড়া ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ করা যাবে। সেক্ষেত্রে আপনি যদি অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেন তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হবে। আপনি সেই জরিমানার ২৫ শতাংশ অর্থ অধিদপ্তর থেকে ফেরত পাবেন।

 

অভিযোগ দায়েরের পদ্ধতি

ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এর ধারা ৭৬ (১) অনুযায়ী, “যে কোন ব্যক্তি, যিনি, সাধারণভাবে একজন ভোক্তা বা ভোক্তা হইতে পারেন, এই অধ্যাদেশের অধীন ভোক্তা-অধিকার বিরোধী কার্য সম্পর্কে মহাপরিচালক বা এতদুদ্দেশ্যে মহাপরিচালকের নিকট ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে অবহিত করিয়া লিখিত অভিযোগ দায়ের করিতে পারিবেন।” অনলাইনে পণ্য ক্রয়ের তারিখ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে সুনির্দিষ্টভাবে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ করতে হবে।

 

যেখানে অভিযোগ দায়ের করা যাবে

মহাপরিচালক, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, ১ কারওয়ান বাজার (টিসিবি ভবন-৮ম তলা), ঢাকা, ফোন: +৮৮০২ ৮১৮৯৪২৫ ই-মেইল: nccc@dncrp.gov.bd

 

যেভাবে অভিযোগ দায়ের করতে হবে

১. দায়েরকৃত অভিযোগ অবশ্যই লিখিত হতে হবে।
২. ফ্যাক্স, ই-মেইল, ওয়েব সাইট, ইত্যাদি ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমে; বা অন্য কোন উপায়ে;

৩. অভিযোগের সাথে পণ্য বা সেবা ক্রয়ের রশিদ সংযুক্ত করতে হবে।অভিযোগকারী তাঁর পূর্ণাঙ্গ নাম, পিতা ও মাতার নাম, ঠিকানা, ফোন, ফ্যাক্স ও

৪. ই-মেইল নম্বর (যদি থাকে) এবং পেশা উল্লেখ করবেন
অপরাধটি সম্পর্কে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কিংবা অধিদপ্তরের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করতে হবে। এতে আপনার নাম, মা ও বাবার নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর, ফ্যাক্স ও ই-মেইল (যদি থাকে) উল্লেখ করতে হবে। অধিদপ্ততরের ওয়েবসাইট থেকে অভিযোগের ফর্মটি ডাউনলোড করে নিতে পারেন।

প্রিন্ট করে তাতে তথ্য ও বিবরণগুলো লিপিবদ্ধ করুন। ফর্মটি পূরণের পর তার একটি ছবি নিতে পারেন অথবা স্ক্যান করতে পারেন যেন লেখা স্পষ্ট বোঝা যায়। বিলের কাগজটির একটি ছবি নিন মোবাইলে অথবা স্ক্যান করুন। অভিযোগ এবং বিল যদি ছবি থাকে পণ্যের বা সেবার তাহলে তা সংযুক্ত করে ই-মেইল করুন- nccc@dncrp.gov.bd এই ঠিকানায়।

Leave a Reply