যে ১১টি বদ অভ্যাস মস্তিষ্কের ১২টা বাজায়

Share Now!

বদ অভ্যাস

Source Image, GETTY IMAGES

বদ অভ্যাস – আজকাল অনেকেই বাইরে সময় কাটাতে আগ্রহী নন। নিজের ঘরে শুয়ে-বসে থাকেন বা হেডফোনে উচ্চস্বরে গান শুনে সময় কাটান। তবে এভাবে আপনার মস্তিষ্কের যে ক্ষতি হচ্ছে, তা কি জানেন? এই নিবন্ধে মস্তিষ্কের ক্ষতিকর ১১টি বদ অভ্যাস এবং কীভাবে সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠবেন তা তুলে ধরা হয়েছে।


যুক্তরাষ্ট্রের প্রিমিয়ার নিউরোলজি অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টারের তথ্যানুসারে, মস্তিষ্কের সবচেয়ে ক্ষতি হয় অপর্যাপ্ত ঘুমের কারণে। প্রাপ্তবয়স্কদের ২৪ ঘণ্টায় ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত। ঘুমানোর সময় মস্তিষ্ক বিশ্রাম নেয় এবং বিষাক্ত পদার্থ পরিষ্কার করে। ৭ ঘণ্টার কম ঘুমালে নতুন কোষ তৈরি হয় না, ফলে স্মৃতি, মনোযোগ ও মেজাজে প্রভাব পড়ে। ডিমেনশিয়া এবং আলঝেইমার্সের ঝুঁকিও বাড়ে।


২. সকালের নাস্তা এড়িয়ে যাওয়া

সকালের নাস্তা এড়িয়ে গেলে রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যায়, যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতায় প্রভাব ফেলে। দিনের পর দিন নাস্তা না খাওয়ার ফলে মস্তিষ্কের কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং এর কার্যক্ষমতা কমে যায়।

৩. পর্যাপ্ত পানি পান না করা

মস্তিষ্কের ৭৫% পানি। পর্যাপ্ত পানি না পান করলে মস্তিষ্কের টিস্যু সঙ্কুচিত হয়ে যায় ও কোষের কার্যক্ষমতা কমে যায়। যৌক্তিক চিন্তা ও সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এজন্য দৈনিক কমপক্ষে ২ লিটার পানি পান করা উচিত।


৪. অতিরিক্ত চাপ এবং শুয়ে বসে থাকা

দীর্ঘসময় চাপের মধ্যে কাজ করলে মস্তিষ্কের কোষ মারা যায় এবং ফ্রন্টাল কর্টেক্স সঙ্কুচিত হয়। এ কারণে স্মৃতি ও চিন্তাশক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। মানসিক চাপ কমানোর জন্য বিশ্রাম নেয়া এবং পর্যাপ্ত নড়াচড়া করা জরুরি।

৫. গুগল সার্চ

প্রযুক্তির উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা মস্তিষ্কের নিজস্ব ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। স্মৃতিশক্তি ও চিন্তাশক্তি দুর্বল হয়। মস্তিষ্ক শাণিত রাখতে সবকিছু গুগল না করে নিজে মনে রাখার চেষ্টা করা এবং ব্রেইন অ্যাকটিভিটির খেলা খেলার পরামর্শ দেয়া হয়।

৬. হেডফোন কানে দিয়ে উচ্চ শব্দে জোরে গান শোনা

উচ্চ শব্দে গান শোনা বা হেডফোন ব্যবহারে শ্রবণশক্তির ক্ষতি হয় এবং এর প্রভাব মস্তিষ্কে গিয়ে পড়ে। মস্তিষ্কের টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ফলে ডিমেনশিয়া ও আলঝেইমার্সের ঝুঁকি বাড়ে।

৭. একা একা থাকা, সামাজিক না হওয়া

মানুষের সাথে আড্ডা বা যোগাযোগ মস্তিষ্ককে উদ্দীপ্ত রাখে। একাকীত্ব মস্তিষ্কে বিষণ্নতা, উদ্বেগ ও ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। তাই সামাজিকীকরণ মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

৮. নেতিবাচক চিন্তা ও মানুষ

নেতিবাচক চিন্তা মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকারক। এতে মানসিক চাপ, হতাশা ও উদ্বেগ দেখা দেয়, যা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতাকে নষ্ট করে। নেতিবাচক চিন্তা থেকে মুক্তি পেতে মনোরোগবিদের সাহায্য নেয়া উচিত।

৯. অন্ধকারে সময় কাটানো বদ অভ্যাস

অন্ধকারে বেশি সময় কাটালে মস্তিষ্কে চাপ তৈরি হয়। সূর্যের আলো মস্তিষ্কের জন্য জরুরি, তাই প্রতিদিন কিছুক্ষণ সূর্যের আলোয় থাকা প্রয়োজন।

১০. খাদ্যাভ্যাস

অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ, তা স্বাস্থ্যকর হলেও, মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে মস্তিষ্কের ধমনীগুলোয় কোলেস্টেরল জমে রক্তপ্রবাহ কমে যায়, যা স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাশক্তি দুর্বল করে। এর ফলস্বরূপ, ডিমেনশিয়া এবং আলঝেইমার্সের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।

জাঙ্ক ফুড, ভাজাপোড়া, চিনি-সমৃদ্ধ খাবার এবং কোমল পানীয়ও মস্তিষ্কের ওপর একই রকম ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। তাই, সঠিক পরিমাণে এবং সুষম খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই ক্যালোরি ট্র্যাকিং অ্যাপ ব্যবহার করে খাদ্য নিয়ন্ত্রণ করেন, তবে সবচেয়ে ভালো উপায় হলো পুষ্টিবিদের পরামর্শ অনুযায়ী ডায়েট প্ল্যান তৈরি করা এবং তা মেনে চলা।

অনেকে মনে করেন, ডায়েট মানেই চর্বি বাদ দিতে হবে, কিন্তু মস্তিষ্কের ৬০% ফ্যাট দিয়ে গঠিত। তাই চর্বি বাদ না দিয়ে সঠিক পরিমাণে সব ধরনের পুষ্টি গ্রহণ করাই ভালো।

এছাড়া, মদ্যপান ও ধূমপানের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে আমরা সবাই জানি, তবে এটি মস্তিষ্কের জন্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর। এগুলো স্নায়ুগুলোকে সঙ্কুচিত করে এবং কোষগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, ফলে মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাস সঠিকভাবে বিকশিত হতে পারে না। এসবের কারণে আলঝেইমার্স এবং ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায় এবং হাইপোক্সিয়ার মতো সমস্যাও হতে পারে।


১১. অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম

অত্যধিক স্ক্রিন টাইম মস্তিষ্কের আকার এবং বিকাশে মারাত্মক ক্ষতি করে। বিশেষ করে ফ্রন্টাল কর্টেক্স, যা বয়ঃসন্ধিকাল থেকে ২৫ বছর বয়স পর্যন্ত বিকশিত হয়, বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব শিশু প্রতিদিন ৭ ঘণ্টার বেশি সময় স্ক্রিনের সামনে কাটায়, তাদের সেরিব্রাল কর্টেক্স পাতলা হয়ে যায়।

মোবাইলের ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক বিকিরণ মাথাব্যথা, বিভ্রান্তি এবং এমনকি মস্তিষ্কে টিউমারের কারণ হতে পারে। তাই শিশুদের স্ক্রিন টাইম সীমিত করা অপরিহার্য। ফোন শরীরের কাছাকাছি রেখে ঘুমানো ঠিক নয়, বরং ফোন পকেটে না রেখে ব্যাগে রাখা ভালো। দীর্ঘক্ষণ কথা বলার সময় ফোন কানে না লাগিয়ে স্পিকারে কথা বলার অভ্যাস করা উচিত। কথা বলার চেয়ে টেক্সট করা তুলনামূলকভাবে নিরাপদ।


উপসংহার:

আমাদের দৈনন্দিন জীবনের কিছু বদ অভ্যাস অজান্তেই মস্তিষ্কের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। অপর্যাপ্ত ঘুম, সকালের নাস্তা এড়িয়ে যাওয়া, পর্যাপ্ত পানি না খাওয়া, অতিরিক্ত মানসিক চাপ, উচ্চস্বরে গান শোনা, একাকীত্ব, নেতিবাচক চিন্তা, এবং অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম—এগুলো মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতাকে নষ্ট করে দেয়। নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, এবং সামাজিক মেলামেশার মাধ্যমে মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখা সম্ভব। আমাদের মস্তিষ্ক শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর একটি, তাই একে রক্ষা করা এবং যত্ন নেওয়া আমাদের সবার দায়িত্ব।

 

  Google News প্রতিদিন আপডেট টেক নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

আরও পড়ুনঃ 

>>  অ্যান্ড্রয়েডের চেয়ে এগিয়ে থাকতে আইফোনে নতুন পাঁচ সুবিধা

>> গুগলের এআই ফটো এডিটিং ফিচার একদম বিনামূল্যে

আমাদের সোশ্যাল মিডিয়া সুমহঃ

                       আপন একাডেমী ফেসবুক পেইজঃ    এই পেজ ভিজিট করুন

          ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে:  এখানে ক্লিক করুন

             Thanks for reading this post and Follow my Social Media Page or Groups.

Leave a Reply