Hypersonic Missile কী? কোন কোন দেশে রয়েছে এই ভয়ংকর যুদ্ধাস্ত্র

Share Now!
hypersonic missile
Hypersonic Missile – ছবি: সংগৃহীত

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক:
বিশ্বের সামরিক শক্তিগুলোর মধ্যে এখন চলছে প্রতিযোগিতা—কে তৈরি করবে সবচেয়ে দ্রুত, নির্ভুল এবং প্রতিরক্ষা ভেদ করতে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র। এই প্রতিযোগিতা থেকেই জন্ম নিয়েছে Hypersonic Missile। শব্দের চেয়ে পাঁচ গুণ বা তারও বেশি গতিসম্পন্ন এই প্রযুক্তি আধুনিক যুদ্ধের ধারা পাল্টে দিচ্ছে। রাশিয়া, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রসহ সামরিক দিক থেকে শীর্ষস্থানীয় দেশগুলো এই মিসাইল প্রযুক্তির উন্নয়ন ও ব্যবহার নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে।


Table of Contents

🔎 হাইপারসনিক মিসাইল কী?

হাইপারসনিক মিসাইল এমন এক ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র যা শব্দের গতির (Mach 1) তুলনায় অন্তত পাঁচ গুণ (Mach 5) দ্রুত চলে। অর্থাৎ এর গতি ঘণ্টায় ৬,১৭৪ কিলোমিটার বা তার বেশি। এই গতির কারণে প্রচলিত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সহজে একে শনাক্ত করতে পারে না, ধ্বংস করতেও ব্যর্থ হয়।

📊 গতি তুলনা:

ধরণ গতি (প্রায়)
শব্দের গতি (Mach 1) ১,২৩৫ কিমি/ঘণ্টা
হাইপারসনিক মিসাইল ≥ ৬,১৭৪ কিমি/ঘণ্টা

উদাহরণস্বরূপ, একটি হাইপারসনিক মিসাইল ১,০০০ কিমি দূরের লক্ষ্যে মাত্র ৮-১০ মিনিটে পৌঁছে যেতে পারে।


আরও পড়ুনঃ

ফোনের ব্যক্তিগত তথ্য যেভাবে সুরক্ষিত রাখবেন


🧪 হাইপারসনিক মিসাইলের দুই প্রকার

১। Hypersonic Glide Vehicle (HGV)

এই ধরনের মিসাইল একটি সাধারণ রকেটের মাধ্যমে নির্দিষ্ট উচ্চতায় পৌঁছে যায়, তারপর গ্লাইড করে লক্ষ্যে আঘাত হানে। এর গতি এবং দিক পরিবর্তনের ক্ষমতা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে বিভ্রান্ত করে।

২। Hypersonic Cruise Missile (HCM)

এগুলো র‍্যামজেট বা স্ক্র্যামজেট ইঞ্জিন ব্যবহার করে নিজস্ব গতিতে টার্গেটের দিকে ছুটে চলে। এটি গ্লাইড নয়, বরং নিরবিচারে উড়তে থাকে এবং লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে।


⚙️ হাইপারসনিক মিসাইল কীভাবে কাজ করে?

১. লঞ্চ প্যাড থেকে দ্রুতগতিতে উৎক্ষেপণ
২. উচ্চমাত্রায় বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ
৩. গ্লাইড বা ক্রুজ মোডে গতি বৃদ্ধি
4. দিক পরিবর্তনের ক্ষমতা (maneuverability)
5. নিশানা এড়িয়ে রাডারের চোখ ফাঁকি
6. নির্ভুল লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত


💣 কেন এই মিসাইল এত বিপজ্জনক?

  • ⚡ অত্যন্ত দ্রুতগতি সম্পন্ন, রাডারে শনাক্ত করা কঠিন

  • 🎯 লক্ষ্যবস্তুর ওপর নিখুঁত আঘাত হানতে সক্ষম

  • ☢️ পারমাণবিক বোমা বহনের সক্ষমতা

  • 🛡️ প্রচলিত মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিতে পারে

  • 🔄 দ্রুত দিক পরিবর্তনের (maneuverability) ক্ষমতা

  • 😱 পূর্ব সতর্কবার্তা পাওয়ার সময় খুবই কম


🌍 কোন কোন দেশে রয়েছে হাইপারসনিক মিসাইল?

দেশ মডেল বা প্রকল্প
🇷🇺 রাশিয়া Avangard, Kinzhal
🇨🇳 চীন DF-17, Xingkong-2
🇺🇸 যুক্তরাষ্ট্র Hypersonic Air-breathing Weapon Concept (HAWC), ARRW (পরীক্ষাধীন)
🇮🇳 ভারত BrahMos-II (রাশিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে), Shaurya (উন্নয়নে)
🇫🇷 ফ্রান্স VMaX (পরীক্ষা চালাচ্ছে)
🇯🇵 জাপান Hypersonic Glide Weapon (উন্নয়ন পর্যায়ে)

🔮 ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও উদ্বেগ

হাইপারসনিক প্রযুক্তি আধুনিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় বড় একটি পরিবর্তন আনছে। এতে যেমন প্রতিরোধ ও প্রতিশোধের ক্ষমতা বাড়ছে, তেমনি অস্ত্র প্রতিযোগিতা আরও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রযুক্তির অপব্যবহার বা ভুল শনাক্তকরণ হলে পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকিও বেড়ে যেতে পারে

⚠️ সম্ভাব্য ঝুঁকি:

  • প্রযুক্তি ছড়িয়ে পড়লে সন্ত্রাসবাদীরা এর অপব্যবহার করতে পারে

  • মানবিক ভুলের কারণে ভুল লক্ষ্যে আঘাত হানতে পারে

  • বিশ্বে নিরাপত্তাহীনতা ও উত্তেজনা বাড়তে পারে


❓প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQs)

🔸 হাইপারসনিক মিসাইল শব্দের চেয়ে কত গুণ দ্রুত?

উত্তর: শব্দের চেয়ে অন্তত ৫ গুণ, অর্থাৎ Mach 5 বা তার বেশি (প্রায় ৬,১৭৪ কিমি/ঘণ্টা)।

🔸 সাধারণ মিসাইলের চেয়ে হাইপারসনিক মিসাইল কতটা আলাদা?

উত্তর: সাধারণ মিসাইল রাডার দ্বারা শনাক্তযোগ্য ও ধ্বংসযোগ্য, কিন্তু হাইপারসনিক মিসাইল অতিদ্রুত এবং দিক পরিবর্তনের ক্ষমতাসম্পন্ন হওয়ায় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা একে প্রতিহত করতে প্রায় অক্ষম।

🔸 হাইপারসনিক মিসাইল পারমাণবিক অস্ত্র বহন করতে পারে কি?

উত্তর: হ্যাঁ, এই মিসাইল পারমাণবিক বোমা বহন করতে সক্ষম, যা একে আরও ভয়ঙ্কর করে তোলে।

🔸 বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত হাইপারসনিক মিসাইল কোনটি?

উত্তর: রাশিয়ার ‘Avangard’ বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত ও কার্যকর হাইপারসনিক মিসাইল হিসেবে বিবেচিত হয়।

🔸 ভারত কবে নাগাদ হাইপারসনিক প্রযুক্তি পূর্ণভাবে ব্যবহার শুরু করতে পারে?

উত্তর: ভারতের BrahMos-II ও Shaurya প্রকল্প বর্তমানে উন্নয়নের পর্যায়ে রয়েছে। আগামী ২-৩ বছরের মধ্যে সফল পরীক্ষার পর ব্যবহার শুরু হতে পারে বলে ধারণা।


🔚 উপসংহার

হাইপারসনিক মিসাইল শুধু একটি দ্রুতগতির ক্ষেপণাস্ত্র নয়, এটি আধুনিক সামরিক ক্ষমতা ও আধিপত্যের প্রতীক হয়ে উঠছে। এর ভয়াবহ গতি, রাডার ফাঁকি দেওয়ার ক্ষমতা এবং পারমাণবিক অস্ত্র বহনের সক্ষমতা বিশ্বকে এক নতুন অস্ত্র প্রতিযোগিতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ভবিষ্যতের যুদ্ধক্ষেত্রে এই প্রযুক্তি বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে, তবে এর সম্ভাব্য ঝুঁকিও উপেক্ষা করার নয়।

Leave a Reply