চাকরি পাওয়ার আমল – একজন ছাত্র অথবা ছাত্রী উচ্চ শিক্ষা গ্রহন করেন একটা ভাল চাকরি পাবার আশায়। কিন্তু চাকরি যেন এক সোনার হরিণ। এটা ধরতে আপনাকে, রাত দিন একাকার করে পড়াশোনা করতে হয়া। তার পরও অনেকই একটা ভাল চাকরি পান না।
বর্তমান করোনা কালীন সময়ে চাকরি পাওয়ার পরিবর্তে যারা চাকরি পেয়েছেন, তারা উলটো চাকরি হারাছেন । সরকারি উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের গবেষণায় দেশে ( মাধ্যমিক থেকে স্নাতকোত্তর ) ডিগ্রিধারী তরুণ – তরুনিদের এক-তৃতীয়াংশ পুরোপুরি বেকার বলে সেই তথ্য উঠে এসেছে। এদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ জরিপে দেশে মোট শ্রমশক্তির ৪ দশমিক ২ শতাংশ বেকার বলে জানিয়েছেন।
আরও পড়ুনঃ ইসমে আজম – মনের আশা পূরণ হওয়ার দোয়া
[lwptoc min=”2″ depth=”6″]
চাকরি পাওয়ার আমল – দ্রুত চাকরি পাওয়ার পরীক্ষিত দোয়া – রিজিক বৃদ্ধির আমল
একটা মান-সম্মত ভালো চাকরির জন্য অনেক রকম পরীক্ষার সন্মুখিন হতে হয়। তার পর ও অসম প্রতিযোগিতা একটা পোষ্ট এর বিপরিতে ৫০০ থেকে ৫০০০ জন পরীক্ষা দিয়ে থাকেন। তার পর যাদের টাকা পায়সা, মামা, খালু, দুলাভাই আছেন তারা অনেকটা এগিয়ে থাকেন। কিছু ব্যতিক্রমীও কিছু মানুষ রয়েছেন, যারা আল্লাহ্ দেওয়া মেধার জরে, শত প্রতিকূলতার মাঝে চাকরি পেয়ে যাচ্ছেন।
মহান আল্লাহ, মানুষ সৃষ্টির বহু বছর আগেই , “ভাগ্য তথা তাকদির” লিপিবধ করে রেখেছেনচ। মানুষ যখন মায়ের গর্ভে ৪ মাস তথা ১২০ দিন বয়স হয় তখুন মহান আল্লাহ্ পুনরায় তাকদির সহ রহু দিয়ে দেন । এই সময় মহান আল্লাহ কিছু অপশন রেখে দেন তাকদির, পরিবর্তনে জন্য ।
আর এই তাকদির তথা ভাগ্য পরিবর্তনের মুল হাতিয়ার হল, এক আল্লাহর এবাদাত। আমল ও দোআর মাধ্যমে মহান আল্লাহ্ তালাকে, রাজি ও খুশি করার মাধ্যমে ভাগ্য পরিবতন করা যায়। আমল ও দোআর পাশাপাশি, আপনাকে পরিশ্রম করতে হবে। মহান আল্লাহ, কোন উছিলা ছাড়াই দিতে পারেন, কিন্তু উছিলা দিয়েই দিতে অধিক পছন্ধ করেন। আপনারা জেনে থাকবেন, যে হযরত মুসা (আঃ) এর উমাত গণকে কোন উছিলা ছারাই দৈনিক পেট পুরে খাওয়াইতেন মহান আল্লাহ। এরকম ইতিহাস অনেক রয়েছে। তাই আপনাকে আমল ও দোআর পাশাপাশি পরিশ্রম করতে হবে। ইনশা আল্লাহ চাকরি পেয়ে জাবেন।
মহান আল্লাহ্ বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ কোন জাতির অবস্থা ততক্ষণ পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে। [সুরা রাদ, আয়াতঃ ১১]
অর্থাৎ যে জাতি তার ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য চেষ্টা করে না, ততক্ষণ পর্যন্ত মহান আল্লাহ তার ভাগ্য পরিবর্তণ করেন না ।
অন্য এক আয়াতে আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, “এটা এজন্যে যে, যদি কোন সম্প্রদায় নিজের অবস্থার পরিবর্তন না করে তবে আল্লাহ এমন নন যে, তিনি ওদেরকে যে সম্পদ দান করেছেন, তাতে পরিবর্তন আনবেন।”
[সূরা আল আনফাল, আয়াতঃ৫৩]
অন্য আর এক আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, “এবং অপরাধী সম্প্রদায়ের উপর থেকে তার শাস্তি রদ করা হয় না।” [আল-আনআম আয়াতঃ১৪৭]
তাই, তাকদির কে পরিবতনে মহান আল্লাহ্ কে রাজি ও খুশি করার কোন বিকল্প নেই।
দ্রুত ভালো চাকরি পাওয়ার পরীক্ষিত দোআ ও আমল
চাকরি পাওয়ার আমল নীচে দেওয়া হলঃ
দোআ
رَبِّ إِنِّي لِمَا أَنزَلْتَ إِلَيَّ مِنْ خَيْرٍ فَقِيرٌ
উচ্চারণ: রাব্বি ইন্নি লিমা আংযালতা ইলাইয়্যা মিন খাইরিং ফাক্বির
অনুবাদ : হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমার প্রতি যে কল্যাণ নাজিল করবে, নিশ্চয় আমি তার মুখাপেক্ষী [সুরা কাসাস, আয়াতঃ২৪]
দোয়ার শানে নুযুলঃ
পবিত্র কুরআনুল কারিমে হজরত মুসা (আঃ) একটি ঘটনায়, মহান আল্লাহর কাছে আশ্রয় লাভ ও কাজের অনুসন্ধানের আহ্বান উঠে এসেছে।
হজরত মুসা (আঃ) একদিন রাজপথ দিয়ে যাচ্ছিলেন, পথ্যি মধ্য একজন মুনিব তার ইহুদি গোলামকে নির্মমভাবে প্রহার করছেন। এই দৃশ্য দেখে আর স্থির থাকতে পারলেন না হজরত মুসা (আঃ)। ইহুদি গোলামকে বাঁচাতে গিয়ে তার মুনিবকে আঘাত করে বসেন। সাথে সাথেই মিসরীয় মনিব মারা যান। এই ঘটনা গুপ্তচররা ফেরাউনকে সংবাদ দিতেই ক্রোধে ফেটে পরেন ফেরাউন। সৈনিকদের ডেকে হুকুম দিলেন, যেখান থেকে পার মুসাকে বন্দি করে নিয়ে এসো।
ফেরাউনের আদেশের কথা শুনেই, আর কাল বিলম্ব না করেই, হজরত মুসা (আঃ) শহর ত্যাগ করলেন হিজরত করলেন আল্লাহ্র নামে অচেনা নগরির মাদিয়ানে। সাথে খাবার দাবার কিছুই ছিলনা , আশ্রয়ের কিংবা জীবিকার কোনো সংস্থান ছিল না।
মহান আল্লাহ বলেন, যখন সে মাদিয়ানের কূপের কাছে পৌঁছল। সেখানে দেখলো একদল লোক তাদের পশুগুলোকে পানি পান করাচ্ছে এবং তাদের পিছনে দু’জন নারী তাদের পশুগুলোকে আগলে আছে। হজরত মুসা (আঃ) বললেন, তোমাদের কি হলো? (দাঁড়িয়ে আছ কেন?) ওরা (নারী) বলল, রাখালরা ওদের পশুগুলোকে নিয়ে সরে না গেলে আমরা আমাদের পশুগুলোকে পানি পান করাতে পারি না। আর আমাদের পিতা অতি বৃদ্ধ মানুষ।
[সুরা কাসাস, আয়াতঃ২৩]
দীর্ঘ পথ চলায় হজরত মুসা (আঃ) ক্লান্ত, তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়েছিলেন। তিনি বিশ্রামের জন্য অবস্থা করলেন এক কুয়ো নিকট বরতি ছায়ার নীচে। তিনি, দেখতে পেলেন দুইজন নারী পশুগুলোকে নিয়ে দারিয়ে আছেন। হজরত মুসা (আঃ) এসে তাদের পশুগুলোকে পানি পান করালেন।
এর পর ছায়া গিয়ে, হজরত মুসা (আঃ) মহান প্রভুর কাছে আকতি মিনতি করে বলেন। “হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমার প্রতি যে কল্যাণ নাজিল করবে, নিশ্চয় আমি তার মুখাপেক্ষী”
অর্থাৎ হে আমার প্রভু, আপনি আমাকে একটা কাজ বা চাকরির বাবস্থা করে দিন। আপনি আমার জন্য যে কাজে বা জীবিকার ব্যবস্থা করবেন, আমি আপনার দেওয়া সেই কাজের বা জীবিকার মুখাপেক্ষী।
আরও পড়ুনঃ যে কোন কারনেই – আপনি কি হতাশ ? – নিরাশ হচ্ছেন
ভালো চাকরি বা রিজিক পেতে এ দোয়া কার্যকরী তা পরের ঘটনাতেই প্রমাণিত।
মহান আল্লাহ বলেন – তখন (ওই) দুই নারীর একজন লজ্জাজড়িত পদে তার কাছে এসে বললো, আপনি যে আমাদের পশুগুলোকে পানি পান করিয়েছেন, তার পারিশ্রমিক দেয়ার জন্য আমার পিতা আপনাকে ডাকছেন। অতঃপর মুসা আলাইহিস সালাম তার কাছে এসে সব ঘটনা বর্ণনা করলে সে বলল, ‘ভয় করো না। তুমি জালিম সম্প্রদায়ের কবল থেকে বেঁচে গেছ। ওদের (দুই নারীর) একজন বলল, হে আব্বা! আপনি একে মজুর হিসেবে নিযুক্ত করুন। কারণ আপনার মজুর হিসেবে নিশ্চয় সে (মুসা) উত্তম হবে, যে শক্তিশালী ও বিশ্বস্ত। [সুরা কাসাস, আয়াতঃ ২৫-২৬]
এভাবে হজরত মুসা (আঃ) এর ফরিয়াদ আল্লাহ্ কবুল কলেন এবং উত্তম কর্মক্ষেত্র ও জীবিকা লাভ করেছিলেন।
রিজিক বৃদ্ধির আমল – তাসবিহ পাঠ
ভালো কর্ম ও জীবিকার নিয়তে দিনে যতবার খুশি মহান আল্লাহ তাআলার গুণবাচক নামে বেশি বেশি পাঠ করা।
يَا وَهَّابُ
উচ্চারণ : ‘ইয়া ওয়াহহাবু’
অনুবাদ : কোনোরূপ প্রতিদান ব্যতীত অধিক দানকারী।
হজরত শাহ আবদুল আজিজ (রহ:) বলেন, যে ব্যক্তি রিজিকের প্রশস্ততার জন্য অর্থাৎ ভাল চাকরির বা উত্তম কর্মক্ষেত্রর প্রত্যাশায়, সে যেন চাশতের নামাজের সময় ১২ রাকাআত নামাজ পড়ে এবং সিজদায় গিয়ে (يَا وَهَّابُ) ইয়া ওয়াহ্হাবু এই পবিত্র গুণবাচক নামের জিকির ৫০ বার অথবা ১০০ বার পাঠ করে। তবে অবশ্যই আল্লাহ্ তার রিজিকের অভাব রাখবেন না।
তাসবিহ হিসাবে আরও পাঠ করতে পারেন মহান আল্লাহ্র গুণবাচক নাম
উচ্চারণ : ‘আর – রাযযাকু’
অনুবাদ :” রিজিক দানকারি “
উচ্চারণ : ‘আল -মুগনিয়ু’
অনুবাদ :” অভাব মোচনকারী”
আরও পড়ুনঃ ইসমে আজম – মনের আশা পূরণ হওয়ার দোয়া
মহান আল্লাহ তো সকল বাদশাহির বাদশা, তার অফুরান্ত ভাণ্ডার রয়েছে। শুধু কায়মনে বাক্কে আল্লাহর কাছে চাইলেই মহান আল্লাহ্ তার দোয়া কবুল করেন। দোয়া কবুলের বিশেষ কিছু মুহূর্ত রয়েছে তার মধ্য শেষ রজনীতে তাহাজুত নামাজ পরে দোয়া করলে আল্লাহ্ কবুল করেন। রাতের শেষ রজনীতে ফজরের আগ পর্যন্ত প্রথম আসমানে এসে মহান আল্লাহ্ তার বান্দাদের ডাকতে থাকেন, কে আছ বিপদ গস্থ আমার কাছে চাও আমি তার বিপদ দূর করে দেব, কে আছ অভাব গ্রস্থ আমার কাছে চাও আমি অভাব দূর করে দেব, কে আছ অসুস্থ আমারা কাছে চাও আমি সুস্থ করে দেব। আমরা এই সময়ে গভির ঘুমে আছাদন থাকি।আল্লাহ্ আমাদের সবাইকে ৫ ওক্ত নামাজ জামাতের সাথে পড়ার তৌফিক দান করন।
মহান আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে উত্তম কাজ ও রিজিকের জন্য উল্লেখিত দোয়া ও তাসবিহ নিয়মিত আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন